ফজলে এলাহী মাকামঃ
গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে জামালপুর জেলার ২০টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে অটোরিকশা বিতরণ করেছে দোস্ত এইড বাংলাদেশ সোসাইটি। সোমবার সকালে দেউরপাড় চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিন্নাত শহীদ পিংকী দোস্ত এইড বাংলাদেশ সোসাইটির এই মহৎ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “সরকার শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর জোর দিচ্ছে। দোস্ত এইডের এই উদ্যোগ সেই লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে। এই অটোরিকশাগুলো শুধু একটি বাহন নয়, এটি ২০টি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমি আশা করি, এই পরিবারের সদস্যরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলবে। সরকারের পাশাপাশি দোস্ত এইডের মতো সংস্থাগুলোর এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি বলেন, “দোস্ত এইড দীর্ঘদিন ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। আজ এই অটোরিকশা বিতরণ তারই একটি অংশ। এটি আমাদের সমাজে বেকারত্ব দূরীকরণে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফজলে এলাহি মাকাম বলেন, “দোস্ত এইড বাংলাদেশ সোসাইটি কাজ করছে নিঃস্বার্থভাবে—যেখানে শুধু সাহায্য নয়, আছে উন্নয়নের চিন্তা। স্বাবলম্বী পরিবারই একটি শক্তিশালী সমাজ গড়ে তোলে। এই প্রকল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
প্রধান আলোচক দোস্ত এইডের হেড অব একাউন্টস এন্ড এডমিন কহিনুর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পরিবারগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করা। প্রতিটি অটোরিকশা একেকটি পরিবারের জন্য টেকসই আয়ের উৎস হবে। আমরা চাই এই পরিবারগুলো আগামী দিনে অন্যদের সহায়তায়ও এগিয়ে আসুক।”
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দোস্ত এইডের প্রোজেক্ট ম্যানেজার আবুল কায়েস। উপস্থিত ছিলেন দেউরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম, দোস্ত এইডের অপারেশন ম্যানেজার জহুরুল ইসলাম, আইটি ম্যানেজার সম্রাট বাবর, শিক্ষা অফিসার শওকত মিয়া, পাবলিক রিলেশন অফিসার মুজাহিদুল ইসলাম, মিডিয়া অফিসার সাজু মিয়াসহ সংস্থার কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
অটোরিকশা গ্রহীতারা কৃতজ্ঞতা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। একজন উপকারভোগী বলেন, “আমি আগে ভাড়ায় অটোরিকশা চালাতাম। যা আয় করতাম তার বড় অংশ মালিককে দিতে হতো। এখন নিজের অটোরিকশা আছে, পুরো আয়ের টাকা পরিবারে খরচ করতে পারব।”
অন্য এক উপকারভোগী বলেন, “কয়েক বছর ধরে বেকার ছিলাম। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দোস্ত এইড যে অটোরিকশা দিয়েছে, এর মাধ্যমে আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।”
আরেকজন বলেন, “অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিনের খরচ মেটাতে পারব, বাচ্চাদের স্কুলেও পাঠাতে পারব। এই সহায়তা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে।”
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে দোস্ত এইড বাংলাদেশ সোসাইটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবিকা উন্নয়ন, পানি ও স্যানিটেশন, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ছানি অপারেশন, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, মসজিদ নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনটি ইতোমধ্যেই প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিয়েছে।