• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন |
  • English Version
ব্রেকিং নিউজ :
জামালপুরে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেল ফতেমা তাবাচ্ছুম নিষ্ঠা জামালপুরে টানা ৩ বার রোবার স্কাউট কমিশনার নির্বাচিত হলেন অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তা সরিষাবাড়ীতে গুলি পিস্তল ম্যাগাজিন উদ্ধার, আসামী রুকন পলাতক বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন এমপি কন্যা মাদারগঞ্জে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে চালক নিহত বকশীগ‌ঞ্জে শিক্ষার্থী‌দের সা‌থে ও‌সির মত‌বি‌নিময় সভা জামালপুরে ৪৫ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সপ্তাহের সমাপনী বকশীগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে নিজের নিরপেক্ষতা জানিয়ে পত্র দিলেন এমপি নূর মোহাম্মদ ইসলামপুরে সেফটিক ট্যাংক খননের সময় মাটি চাপায় শ্রমিকের মৃত্যু তীব্র তাপদাহে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরন আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের

মরে যাচ্ছে গাছপালা ও মাছ যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে কয়েক হাজার বিঘা জমি অনাবাদি

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মরে যাচ্ছে আবাদি ফসল, পুকুরের মাছ ও বাগানের গাছপালা। এতে চলতি মওসুমে প্রায় দেড় হাজার বিঘার জমিতে কাক্সিক্ষত ফসল পায়নি কৃষক।
ভূক্তভোগী কৃষকদের দাবি, কারখানার ক্যামিকেলযুক্ত বিষাক্ত বর্জ্যপানি বিকল্প উপায়ে শোধন বা নিষ্কাশন না করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে জমি ও বিলের দিকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০টি গ্রামের আবাদি জমি, বিল ও পুকুরের চাষাবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতিপূরণে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের খামখেয়ালীপনায় তা আটকে আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দৈনিক এক হাজার ৭০০ মে. টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকেই কারখানার ক্যামিকেল মিশ্রিত বিষাক্ত বর্জ্য ও আবাসিক কলোনির ব্যবহৃত বর্জ্য পানি কলোনির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে বড় পাইপ স্থাপন করে প্রতিদিন সরাসরি পার্শ্ববর্তী জমি ও বিলে ফেলা হচ্ছে। এতে প্রায় দেড় হাজার বিঘার জমি অনাবাদি পড়ে আছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, বিষাক্ত বর্জ্যপানির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে পোগলদিঘা ইউনিয়নের ঢুরিয়ারভিটা ও পাখিমারা গ্রামে। এই দুই গ্রামের জমিতে আবাদ করা সম্ভব হয় না। কিছুটা আবাদ হলেও খরচের টাকা তোলাই কষ্টকর। পাঙ্গাইশ্যার বিল ও পুকুরগুলোর মাছ প্রায়ই গণহারে মরে যায় এবং গাছপালায় মড়ক ধরেছে। জমির ফসল, মাছ ও গাছপালা ক্ষতি ছাড়াও অন্তত দশটি গ্রামের মানুষ চর্মপীড়া, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যাসহ নিয়মিত বিভিন্ন রোগে ভুগছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পোগলদিঘা ইউনিয়নের ঢুরিয়ারভিটা, পাখিমারা, চরপাড়া, কান্দারপাড়া ও আওনা ইউনিয়নের মেন্দারবেড়, গোয়ালবাথান ও টিকরাপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রাম কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ক্ষতির শিকার। চর্মপীড়ার ভয়ে ক্ষেতে কাজ করার শ্রমিক মিলে না। পাঙ্গাইশ্যা, বড়বাইদ ও খুটামারা বিলে মাছ চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে কারখানার সার পঁচা ও বিষাক্ত বর্জ্যপানিতে খুটামারা বিলের অর্ধকোটি টাকার মাছ মরে ভেসে উঠে।
ঢুরিয়ারভিটা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুল গণি (৪৫) জানান, কারখানা ও আবাসিক কলোনীর বিষাক্ত বর্জ্যপানির প্রভাবে তার দেড় বিঘা জমিতে এবছর মাত্র তিন মণ ধান পাওয়া গেছে। পঁচা পানিতে কাজ করে শরীরে নানা অসুখ ধরে, তাই কাজ করার মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না।
কৃষক কফিল উদ্দিন জানান, তার তিন বিঘা জমি, আবাদ হয়েছে মাত্র এক বিঘাতে। বাকি জমি পতিত পড়ে আছে। আবাদ করতে গিয়ে পঁচা পানিতে প্রায়ই অসুখে ভোগতে হচ্ছে।
কৃষক সোলাইমান খান জানান, তার দুই বিঘা জমিতে কোনো আবাদই হয় না। তাই জমি পতিত ফেলে রাখা হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ করা হলেও কোনোই প্রতিকার মিলছে না।
এ ব্যাপারে পোগলদিঘা ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নাই। এবছর তার নিজের পুকুরেও বর্জ্যপানি মিশে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। কৃষকদের বাঁচাতে দ্রুত সুনজর প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
কারখানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জামালপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা গত বছরের ১১ নভেম্বর কারখানার কর্তৃপক্ষকে আবাসিক কলোনীর ব্যবহৃত বর্জ্যপানি সংরক্ষণের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ করতে চিঠি দেয়। (যার স্মারক নম্বর ৩১.৪৫.৩৯০০.০২০.০৯.০০৪১৯-৭৫১, তারিখ ১১-১১-২০১৯ইং)। চিঠিতে স্থাপর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর ৮(৪) উপ-ধারা ৩ মোতাবেক জমিগুলোর প্রাক্কলিত মূল্য হিসেবে কৃষকদের দুই কোটি পঁচাত্তর লাখ ৯৪ হাজার ৯১৪ টাকা পঁচিশ পয়সা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা পরিশোধের নির্দেশ থাকায় আগামী ৭ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বাবু অভিযোগ করেন, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান জাভেদ আনোয়ার ক্ষতিগ্রস্থ জমি পরিদর্শন করে জমি অধিগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিশ্রতির সময়সীমা শেষপর্যায়ে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বারবার তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না, তা দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান জাভেদ আনোয়ারের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন এক লিখিত পত্রে জানান, বিরাজমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা সকল দাপ্তরিক কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না, বিধায় সময়সীমার শেষে পরদিন থেকে আরো ৬০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।