• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন |
  • English Version
ব্রেকিং নিউজ :
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বকশগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক এমদাদ বকশীগঞ্জে ২০০ বছরের পুরোনো জামাই মেলা ইসলামপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি চরমে অনুপস্থিত থেকেও বেতন উত্তোলন শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করতে এপির অভিনব উদ্যোগ জামালপুরে যমুনার বামতীর রক্ষার সমীক্ষা প্রকল্পের প্রতিবেদন নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত স্মরণ সভা: ডা.আলাউদ্দিন সিরাজি বকশীগঞ্জে পুলিশের সহায়তায় ছেলেকে ফিরে পেল পরিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলীকে সভাপতি, জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে সুজনের কমিটি গঠন এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে জামালপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ বকশীগঞ্জে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে ইসতিসকার নামাজ আদায়

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মুরগিকান্ড এক কেজি ফার্মের মুরগির দাম ৩০০ টাকা

সাইমুম সাব্বির শোভন,জামালপুর:

আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের খাদ্যপণ্য কেনা হচ্ছে দ্বিগুন মুল্যে। উচ্চমুল্যে খাদ্যপণ্য কেনা হলেও রোগীদের খাদ্য তালিকা থেকে খাসির মাংস ও মাছ বাদ দিয়ে প্রতিদিন দেয়া হয় ফার্মের মুরগী। উচ্চমুল্য ও রোগীদের খাবার নিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হলেও কর্তৃপক্ষ বলছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যপণ্য কেনা হচ্ছে। আর প্রতিদিন ফার্মের মুরগী দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন কর্তৃপক্ষ।

জেলার বাজারে ফার্মের মুরগীর কেজি ১১০ টাকা, শরবি কলার হালি ২০ টাকা, সাগর কলার হালি ১০ থেকে ১২ টাকা, ডিমের হালি ৩০ টাকা ও সিদ্ধ চাল (২৮ জাতের) ৩৫ টাকা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফারহান এন্টারপ্রাইজ ফার্মের মুরগি ৩০০ টাকা, ডিম ৫৬ টাকা হালি, কলা ৪৫ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৬০ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করছে। যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন।

রোগীদের খাবার তালিকায় দুপুর ও রাতে সপ্তাহে দুই দিন খাসির মাংস, দুইদিন মাছ, তিনদিন ফার্মের মুরগির থাকলেও প্রতিদিনই দেয়া হয় ফার্মের মুরগী। সকালের নাস্তায় রয়েছে ডিম,কলা পাউরুটি। হাসপতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদার মাছ ও খাসির মাংস না দিয়ে উচ্চমুল্যে সরবরাহকৃত ফার্মের মুরগী,কলা, ডিম প্রতিদিন সরবরাহ করে আসছে।

হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীরা বলছেন, প্রতিদিন ফার্মের মুরগী ও মাঝে মধ্যে রাতে ডিম দেয়া হয়। অভিযোগ ফার্মের মুরগী খেতে না পারায় বাইরের খাবার খেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। আবার অনেকেই নিরুপায় হয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে।

হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ১৫নং বেডে ভর্তি রোগী মোতাহার জানান- তিনি ১৯ দিন যাবত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এই ১৯ দিনের ভেতর কেবল মাত্র ২ দিন তাদের খাসির মাংস দেওয়া হয়েছে বাকি ১৭ দিন ধরে ফার্মের মুরগি খাচ্ছেন।

গাইনি ওয়ার্ডের ২০নং বেডে ভর্তি রোগী পারুল বেগম জানান- তিনি  ৫দিন যাবত ভর্তি আছেন। তিনি ফার্মের মুরগি না খাওয়ায় প্রতিদিন বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়ে থাকেন।

অর্থোসার্জারী ওয়ার্ডের পুরুষ বিভাগের  ২২নং বেডে ভর্তি হতদরিদ্র রোগী আলিমউদ্দিন জানান- হাসপাতালের খাবার খুবই নিন্মমানের । তবুও কোনো উপায় না থাকায় ৩দিন যাবত তিনি ফার্মেও মুরগি খেয়ে আসছেন।

মাছ মাংস না দিয়ে প্রতিদিন ফার্মের মুরগী দেয়ার বিষয়ে খাবার দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের ষ্টুয়ার্ড লিটন চন্দ্র সুত্রধর বলছেন, রোগীদের অভিযোগ ঠিক নয়। তালিকা অনুযায়ী খাবার দেয়া হয়। তবে ফার্মের মুরগি একটু বেশি দেয়া হয়।

একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১৬৮.৭৩০ গ্রাম ফার্মের মুরগির বরাদ্দ হওয়ায় ২৫০ জন রোগীর জন্য দিনে ৪২.১৮২ কেজি এবং বছরে ১৫৩৯৬.৬১২৫ কেজি ফার্মের মুরগির প্রয়োজন হয়। হাসপাতালের টেন্ডার কমিটির নির্ধারিত ক্রয়মূল্য অনুযায়ি এর মূল্য দাড়ায় ৪৬ লাখ ১৮ হাজার ৯শত ৮৩ টাকা। তবে ১১০ টাকা কেজি হিসাবে জেলার বাজারে এর স্বাভাবিক মূল্য দাড়ায় ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬২৭ টাকা। এতে বাজার মূল্যের সাথে টেন্ডার কমিটির ক্রয়কৃত মুরগির মূল্যের ব্যবধার দাড়ায় ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৬ টাকা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানিয়েছেন প্রতিদিন ৩০-৩৫ কেজি ফার্মের মুরগি কেনা হয় এবং রোগীদের খাবারের জন্য দেয়া হয়।

আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন- প্রতিদিন সেখানে নি¤œ মানের ফার্মের মুরগী দেওয়া হচ্ছে। যেখানে ১০০ টাকা কেজি, সেখানে ধরা হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি। যার জন্য বছরে প্রায় ২৯লাখ ২৫ হাজার টাকা লুটে নিচ্ছে টেন্ডার কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার। অনতিবিলম্বে এই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছে- তাদেরকে মনিটরিং এর ব্যবস্থা করে যাতে নি¤œমানের খাদ্য পরিহার করে। প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহে যে রুটিন আছে। সেই রুটিন অনুযায়ি যাতে খাদ্য দেওয়া হয়। আর যদি না দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং-এ আমরা এই অভিযোগগুলো উত্থাপন করবো।

এ বিষয়ে জামালপুর আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: ফেরদৌস হাসান জানান- টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুযায়ী ঠিকাদার এই মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করে থাকে।

জামালপুর আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও টেন্ডার কমিটির সভাপতি ডা: হাবিবুর রহমান ফকির এমন উচ্চ মূল্যে খাদ্য পন্যের দাম নির্ধারনের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে রোগীদের খাদ্যপণ্য ও পথ্য বাবদ খরচ হয় ১ কোটি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।