ফজলে এলাহী মাকামঃ
জামালপুরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) আয়োজনে ‘যমুনা নদী সিস্টেমের বামতীরে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত সম্ভাব্য সমীক্ষা (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পে প্রস্তাবিত অবকাঠামো পরিকল্পনা এবং তার সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব বিষয়ক মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুরে শহরের বেলটিয়ায় লুইজ ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্কের সেমিনার কক্ষে এই কর্মশালায় বাপাউবো’র কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি।
এ সময় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম এমপি, জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশীদ ও জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাপাউবো’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম, বাপাউবো’র পূর্ব রিজিওনের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ ও জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান,জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপাউবো’র পরিকল্পনা পরিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ও প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
কর্মশালায় জয়বায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, পানিপ্রবাহ ক্ষমতা এবং যমুনা নদীর রূপগত পরিবর্তন বিবেচনা করে জামালপুর জেলার যমুনা নদীর বাম তীরবর্তী এলাকার বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত উপায় উদ্ভাবন করার জন্যই ‘যমুনা নদী সিস্টেমের বামতীরে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত সম্ভাব্য সমীক্ষার (ফেজ-১) মূল উদ্দেশ্য ছিল। সমীক্ষা শেষে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা সম্পূর্ণ বন্যা সুরক্ষার জন্য বিকল্প-১ এবং বেড়িবাঁধ ও নিয়ন্ত্রক ছাড়া বন্যা ব্যবস্থাপনা বিকল্প-২ নামে দুটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।
বিকল্প-১ প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে শুরু করে ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ২১টি নতুন রেগুলেটর নির্মাণ, সাতটি স্থানে প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, নদী সংযুক্ত বংশী খালের ১৬ কিলোমিটার পুন:খনন এবং হারগিলা ক্রসবাঁধ সংস্কার করা। এই বিকল্প-১ প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের সুবিধা হিসেবে বলা হয়েছে, এলাকার একটি অংশ বন্যা সুরক্ষিত হবে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। এছাড়া অসুবিধা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে পুরো এলাকা বন্যা রক্ষার জন্য উপযুক্ত নয়, পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি আছে, বর্তমান উন্নয়ন নীতির সাথে মতানৈক্য আছে, বাস্তবায়ন খরচ বেশি পড়বে, ড্রেনেজ ব্লকের ঝুঁকি থাকবে এবং মাছের উৎপাদন হ্রাস পাবে।
অন্যদিকে বিকল্প-২ প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এতে দীর্ঘ ১০৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বাদ রেখে শুধুমাত্র যমুনা নদীর বামতীরে তিনটি স্থানে মাত্র ৬ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার, নদী সংযুক্ত বংশী খালের ১৬ কিলোমিটার পুন:খনন, দাঁতভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং হাড়গিলা ক্রস বাঁধের মাথা ও দুই পাশ শক্তিশালী করে ড্রেনেজ উন্নতি ও নদীতীর ক্ষয় সুরক্ষার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই বিকল্প-২ প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করা হলে কোন উল্লেখযোগ্য অসুবিধা হবে না বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কর্মশালার মুক্ত আলোচনায় এবং প্রধান অতিথি, সম্মানিত অতিথি, বিশেষ অতিথি ও অংশগ্রহণকারী জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ সবাই যমুনা নদী তীর রক্ষায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে শুরু করে ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজের প্রস্তাবনাসহ গৃহিত বিকল্প-১ প্রকল্প প্রস্তাবটির পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
এ সময় বিকল্প-২ নয়, বিকল্প-১ প্রকল্পটিই আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা গবেষণা করে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি। এই প্রকল্পটির সমীক্ষা কার্যক্রম চলাকালে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে না করায় প্রকল্পটি এখন সমালোচনার মুখে পড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্ধতন প্রকৌশলীরা এ কর্মশালায় অংশ নেন।