• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন |
  • English Version
ব্রেকিং নিউজ :

সাবেক প্রাদেশিক আইন পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন আর নেই

 

কাফি পারভেজ ঃ

জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার পাখিমারা সরকারবাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষানুরাগী ও সাবেক প্রাদেশিক আইন পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবি আশরাফ হোসেন বুধবার বেলা ১১.১৫ মিনিটে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী ম্যাডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি…………..রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ক্যানরোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র এবং ১ কন্যা সন্তান রেখে যান।

বিশিষ্ট আইনজীবি, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রাদেশিক আইন পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার পাখিমারা গ্রামের সরকারবাড়ীর এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩৭ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মকবুল হোসেন সরকার। মাতা মরহুম মোছা: আলীমুন্নেছা। আশরাফ হোসেন ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন।

আশরাফ হোসেন ১৯৫৮ সালে জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে আই এ এবং ১৯৬২ সালে বিএ পাশ করে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রের এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি পাশ করে ময়মনসিংহ বারে যোগ দিয়ে আইন পেশা শুরু করেন।

তিনি ছিলেন কর্মবীর, সফল রাজনৈতিক সব্যক্তিত্ব, একজন আদর্শবান জনপ্রিয় ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাঝে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। মেধা, মনন, কর্ম প্রয়াস শ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে গড়েছিলেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে। তিনি জীবনের সুদীর্ঘ সময়ে সংগঠক, সমাজকর্মী এবং সর্বোপরি একজন মেহনতী মানুষের প্রকৃত জনদরদী হিসেবে অতি পরিচিত মানুষ ছিলেন। নিজ মেধা ও ব্যবস্থাপনা যোগ্যতা গুনে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপজেলাবাসীর মন জয় করতে তিনি সক্ষম হয়ে ছিলেন। সর্ব মহলে তাঁর ছিল গ্রহণযোগ্যতা। তিনি নিজের জীবনের ঐশ্বর্য্য ও প্রাচুর্য্যরে কথা ভুলে গিয়ে নিজেকে জনসেবায় আত্ম নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সবার প্রিয় অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন।

তিনি ছাত্র জীবন থেকেই স্বাধীনচেতা ছিলেন। স্কুল জীবনেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষা জীবন শেষে আইন পেশার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি রাজনৈতিক ও সমাজ সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। বকশিগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালনসহ এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রথম নির্বাহী কমিটির আহবায়ক। তিনি খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা ও উলফাতুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বকশিগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে বকশিগঞ্জ থানা ও উপজেলায় উন্নীত করার আন্দোলনের মূল ব্যাক্তি ছিলেন তিনি। বকশিগঞ্জের আজ যে অবয়ব বা উন্নতি তার ভিত তৈরী করে গিয়েছিলেন তিনি। বকশিগঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়নের পিছনে তারবলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। ১৯৫৮ সালে গঠিত ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ছিলেন এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১ (বর্তমানে জামালপুর-১) থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গণপরিষদ সদস্য। বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদনকারীদের অন্যতম। জামালপুর জেলা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর প্রথম পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। সর্বোপরি তিনি একজন নিরহংকার ভালো মানুষ ছিলেন।

শত ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর রহমতে তিনি সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তিনি ৪ পুত্র এবং ১ কন্যা সন্তানের জনক ও একজন সফল পিতা। মোছাঃ হায়াতুন নেছা তার গুনবতী স্ত্রী।

সবার বড় ছেলে মো: ইফতেখার হোসেন পলাশ একজন সফল ব্যবসায়ী, মেজো সন্তান মো. এনায়েত হোসেন বিজয় তিনি আয়কর আইনজীবি, ৩য় ছেলে মো. মোফাখখার হোসেন খোকন ব্যবসার পাশাপাশি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত, মো: নাজমুল হাসান রুপন হাইকোর্টের আইনজীবি এবং একমাত্র কন্যা সাজিয়া আফরীন রীমা রুপালী ব্যাংক লি: এর প্রিন্সিপাল অফিসার।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।