মন্তব্য কলাম—-ডাঃ নাহিদা আক্তার পিংকিঃ
মানুষের পাশে থাকার জন্য একটা নীতি লাগে ।আমি সেই নীতি তে বিশ্বাসী একজন মানুষ।রাজনীতি না করলে মানুষের পাশে থাকা যায় না কে বলে!মানুষের পাশে থাকতে অনেক বড় অফিসার ,হতে হবে আমি এসবে বিশাসী নই।বিপদ যে কারো যখন খুশি আসে।সেই বিপদে পাশে থাকার একটা নাম আমি হতে চাই।এর জন্য কোন পোস্ট ,পদবী আমার দরকার নাই।
এখন আসি আমার উদ্যোক্তা হবার গল্পে ।আসলে পেশায় আমি একজন দন্ত চিকিৎসক ।ছয় বছরের শিক্ষা জীবন শেষ করে খুব আয়েশের জীবন কাটাচ্ছিলাম।বড়লোক বাবার প্রথম সন্তান ।স্বামীও অভাব নেই কারন তিনি সরকারী অনেক বড় অফিসার ছিলেন।।তাই ডাক্তারী পাশ করবার পরও কাজ করার ঠিক প্রয়োজনীয়তা টা হলো না ।কারন অভাব বোধ টা ছিল না যে পড়াশোনা করেছি এখন সেই মতো ডাক্তারী করা দরকার।বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম ।হঠাৎ করেই সব শেষ হয়ে গেলো।
আব্বা মারা গেলেন কিডনী ডায়ালাইসীস এর মাঝখানে।ততদিনে একটা সন্তান আমার দুনিয়ার মুখ দেখেছে।স্বামী ও দিন দিন বদলে যেতে লাগলো॥এমন একটা সময় আসলো স্বামী বেচারা আমাকেই বদলে ফেললো।ডিভোস হয়ে গেলো।ডিভোসের চলতি পথে দিতীয় সন্তান ও চলে এসেছে।আমি দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ীতেই আশ্রয় নিলাম।আসলে খুব সত্য কথা টাকা পয়সার অভাব ছিল না।ওই যে শুরুতে বললাম বড়লোক বাবার আদরের বড় সন্তান ।সেটা একটা কারন।সারা দুনিয়াতে তখন করোনা আতংক।
করোনার শুরুর দিকে কিন্তু কেন জানি মনে হতে লাগলো কিছু একটা করা দরকার।কিন্তু মনের দিক থেকে এতো বেশি সাহস হারিয়ে ফেলেছিলাম যে ভালো করে দাঁড়াতেও ভয় লাগতো।সেই সময় হঠাৎ করেই মনে হলো আচ্ছা অনলাইনে কিছু একটা করা যায়।এতে ঘরের বাইরে যাবার দরকার পরবে না ,মানুষের নানান প্রশ্নের জবাব ও দেওয়া লাগবে না আবার অন্য দিকে অল্প আয় ও হবে ।যেই কথা সেই কাজ ।আমার মনে আছে তিন হাজার টাকার শাড়ী কিনেছিলাম।সুতি শাড়ী ।প্রথম বারেই কেন জানি মানুষের নজরে চলে এলো।সপ্তাহ ঘুরতেই সব শেষ।তারপর রিস্ক নিলাম।লাভ +ধার সব মিলিয়ে দশ হাজার টাকার শাড়ী চাদর নিলাম।মাশাললাহ আমি পেরেছি ঃসাহস বারলোঃউঠে দাঁড়ালাম ।
সেই সাথে আবার শুরু করতে চেষ্টা করছি ডাক্তারি॥সেটার জন্য অল্প অল্প করে টাকা আলাদা করে রাখছি যাতে খুব শীঘ্রই একটা চেম্বার দাঁড় করাতে পারি।ও আচ্ছা আমার পেইজ এর নাম শাডীতে নারী।সত্যিই শাড়ীর উপরে কোন কিছুই নাই একজন নারীর জন্য। মডেল নেবার সামর্থ ছিল না।তাই নিজেই মডেল হয়ে গেলাম।
কাজ করছি সুতি শাড়ি নিয়ে।আরামদায়ক সুতির উপরে কোন কাপড় হয় না ।
আমি একজন ডাক্তার হয়ে সফল উদ্যোক্তা,জীবনের অনেক ঝড় যুদ্ধ শেষ করে এখানে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে কথা বলছি॥
আমি যে হাতে ফিলিং করি,সেই হাতে রান্না করি,সেই একই হাতে বাচ্চার ডায়াপার ও বদলাই।অনেকে বলে সুন্দরীরা নাকি শুধু সাজাতেই জানে ,আমি কখনো সেভাবে নিজেকে দেখি নি।ডাক্তার রা নাকি দেখতে ভালো হয় না।আমি বলি যে রাধে সে চুল ও বাঁধে।কে বলে আমরা নারীরা অক্ষম।হাজার কষ্টের পরও হাসিমুখ নিয়ে কথা বলা এই আমি আজকে এখানে দাঁডিয়েছি শুধু এবং শুধুমাত্র মনের সাহসের জোরে ।বাবার মৃত্যুর পর যখন কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না ঠিক তখনই মনে হলো আমার নিজেরই কিনারা ঠিক করতে হবে।কেউ আসবে না।হয়তো সহমর্মিতা দেখাবে তাও কিছুক্ষনের জন্য ।কিন্তু আসল যুদ্ধ আমার একার ,সম্পূর্ণ একার।নিজের মন কে শক্ত হতে শিখিয়েছি ।কেঁদেছি ।আবার হাসিমুখে শুরু করেছি ।
আমার পরিচয় আমি নারী ,আমি পারি !
নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যার ব্যাপার আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো